এবিএম আতিকুর রহমান বাশার :
কুমিল্লার দেবীদ্বারে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে উপজেলার তুলাগাঁও গ্রামে একদল প্রতারক একটি ব্যাটারী চালিত আটো রিক্সা ছিনতাইকালে স্থানীয়দের হাতে আটকের পর গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করেছে।
এসময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশের একটি খাকি রং’র হাতাকাঁটা জ্যাকেট, একটি কালো রং’র ওয়ারলেস সেট, একটি কালো রং’র হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর, দু’টি কালো রং’র মোবাইল সেট, একটি পুরাতন সিএনজি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে।
ওই ঘটনায় ধামতী (মধ্যপাড়া) গ্রামের মো, আব্দুল করিম’র পুত্র ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক মোঃ রুহুল আমিন(৩৮) আটক মেহেদী, নূরুল ইসলাম, মারুফ সহ ৩ভূয়া ডিবি পুলিশ সহ অপর পলাতক ২ জন বাবুল ও সোহেল সহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বুধবার বিকেল সোয়া ৪ টায় আসামীদের কুমিল্লা আদালতে প্রেরণ করা হয়।
মামলায় অভিযুক্তরা হল, দেবীদ্বার উপজেলার মরিচা গ্রামের সরকার বাড়ির মো, নাজমুল হাসান সরকার (মিন্টু)’র পুত্র মো. মেহেদী হাসান(২০), মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের (পূর্বপাড়া আলিম উদ্দিন’র বাড়ী)’র মৃত: কফিল উদ্দিনের পুত্র মোঃ বাবুল ময়িা(৪০), একই গ্রামের(পূর্বপাড়া) গ্রামের মো. জসীম উদ্দিন’র পুত্র মোঃ মারুফ(২৮), (চাঁনগাজী মুন্সী বাড়ী)’র মো. আব্দুল মতিন’র পুত্র মো. সোহলে(৩০) এবং দারোরা গ্রাম(রিপুজি বাড়ির)’র মো.আব্দুল মতিন’র পুত্র মো. নুরুল ইসলাম(২৬)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টায় ধামতী মধ্যপাড়া গ্রামের মো, আব্দুল করিম’র পুত্র মো. রহুল আমিন(৩৮) তার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা নিয়ে ধামতী হাবিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সিএনজি ষ্ট্যাশনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় লাঠি ভরকরে একজন পঙ্গুলোক এসে তাকে তুলাগাও গ্রামে যাওয়ার জন্য ১২০ টাকায় ভাড়া ঠিক করে, গন্তব্যে রওয়ানা হন।
চালক অটোরিক্সাটি নিয়ে উপজেলার বক্রিকান্দি গ্রামের মো. মোমিন ভূঁইয়া’র মৎস খামার’র উত্তর পূর্ব কোনে ধামতী থেকে নূরিতলা সড়কের উপর নির্জন জায়গায় পৌঁছলে, পূর্ব থেকে একটি সিএনজিতে অপেক্ষেয়মান একদল লোক ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তাদের অটোরিক্সাটি গতিরোধ করে। যাত্রীবেশী পঙ্গু লোকটিও লাঠি ফেলে সুস্থ্যশরীর নিয়ে ওই ডিবি পরিচয়দানকারী লোকদের সাথে যুক্ত হয়ে যান।
ডিবি পুলিশ অটোরিক্সাটিকে তাদের সাথে থাকা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা একটি পোটলা বেরকরে এর ভেতরে বাবা (ইয়াবা) ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে অটোরিক্সা চালককে ইয়াবা ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে তাকে মাধর ও গাল মন্দ করতে থাকে। এসময় ওয়ার্লেস দিয়ে কার সাথে বলতে শোনা যায়।
এক পর্যায়ে তারা অটোচালক রুহুল আমিনকেগামছা দিয়ে হাত ও চোখ বেঁেধ জোর পূর্বক তাদের বহনকৃত সিএনজিতে তুলে নেয়। ডিবি জেকেট পড়া ১জন সহ ২ দু’পাশে বসে। তারা তাকে চান্দিনা থানায় নিয়ে যেতে বলে। পেছনে ছিনতাই করা ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সাটি নিয়ে ডিবি জেকেট পড়া অপর ১জন ও চালক অটোরিক্সাটি নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। অন্যান্য চোরগুলো অটোরিক্সা চালককে দেবীদ্বার উপজেলার গজারিয়া গ্রামের কবরস্থানের পাশে আসার পর ভাঙ্গা রাস্তায় আটকে যায়। এ সময় রুহুল আমিনকে সিএনজি থেকে লাথি মেরে রাস্তার পাশে একটি ডোবায় ফেলে চলে যাওয়ার সময় রুহুল আমিন গামছার বাঁধন খুলে, ডাকাত ডাকাত বলে শোর-চিৎকার করে পেছনে ছুটতে থাকে। আশপাশের লোকজন টের পেয়ে দৌড়ে এসে সিএনজিটিকে ধাওয়া করে তিনজনকে আটক করে ফেলে।
পরে তাদের উত্তম মধ্যম দিয়ে সুলতানপুর ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দেন। চেয়ারম্যান আসার পূর্বেই ক্ষুদ্ধ জনতা কর্তব্যরত গ্রাম পুলিশ জাকির হোসেনকে বেধরক মার ধর করে কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ছিনতাই কারীদের বেধরক মার ধর করে। মারাত্মক আহত গ্রাম পুলিশ (চকিদার) জাকির হোসেন(২৮)কে স্থানীয়রা উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. সফিকুল ইসলাম এসে পরিস্থিতি নিন্ত্রণ করেন এবং থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আটক ৩ ছিনতাইকারীকে ওই ইউপি’র ২ গ্রাম পুলিশ মধূচন্দ্র দাস ও আলাউদ্দিনের হেফাজতে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বুধবার দুপুরে পুলিশ এসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে তিন অভিযুক্ত ছিনতাইকারী ও ছিনতাই কাজে ব্যাবহৃত উদ্ধার হওয়া একটি খাকি রং এর হাতাকাঁটা জ্যাকেট, একটি কালো রং এর ওয়ারলেস সেট, একটি কালো রং এর হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর, দু’টি কালো রং এর আইটেল মোবাইল সেট, একটি পুরাতন সিএনজি উদ্ধার করা মালামাল সহ থানায় নিয়ে যায়।
অপরদিকে আহত চকিদার জাকির হোসেন দায়িত্ব পালনকালে তার উপর হামলা ও মারধর করে অফিসের কক্ষ ভাঙ্গার অভিযোগে উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের জহীর(৩০), রনী(২৫) ও ঝন্টু(৩৫)কে আসামী করে দেবীদ্বার থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা দেন।
এ ব্যাপারে ১৪নং সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সংবাদ পেয়ে ইউপি কার্যালয়ে এসে আটক তিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নাম পরিচয় সংগ্রহ করি। এরই মধ্যে তাদের ওয়াকি টকি (ওয়ারলেস সেট) দিয়ে অপর দুই ছিনতাইকারীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় উপজেলার রাজামেহার গ্রামে অবস্থান করছে, এপাশ থেকে ওদের ওখানে অবস্থানের কথা বলে তাদের ধরে আনার জন্য এখান থেকে লোক পাঠানো হয়। এরই মধ্যে ওয়ার্লেসে ওপাশ থেকে ওরা জানায় এখানে লোকজন বেশী তাই বেশীক্ষন থাকা যাবেনা। আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বেই ওরা সটকে পড়ে। আমার ইউপির জাকির হোসেন নামে এক গ্রাম পুলিশকে তার কর্তব্য কাজে বাঁধাদান ও তাকে মার ধর করার অভিযোগে জাকির বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ জমা দিয়েছে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্ত দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) আব্দুল বাতেন জানান, আটক ৩ জন ও পলাতক দু’জন সহ ৫জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করে আসামীদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মালামাল জব্ধ করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার,
০১৮১৯৮৪৪১৮২,
২৮/১০/২০২০ইং।