মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা :
🇧🇩 ঘর কন্যা ম্যাচিং সেন্টার 🇧🇩 ঘর কন্যা সু-ষ্টোর 🇧🇩 ঘর কন্যা মেডিসিন কর্ণার 🇧🇩 ঘর কন্যা কন্যা কনফেকশনারী 🇧🇩 ঘর কন্যা টি শপ 🇧🇩 ঘর কন্যা পোল্ট্রি এন্ড মৎস খামার 🇧🇩 (ড্রিম ডায়াগনস্টিক সেন্টার,ড্রিম ক্যাবল নেটওয়ার্ক)ড্রিম বয়েজ দেবিদ্বারের যৌথ প্রতিষ্ঠান।🌹

বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি ও পিতামাতার করণীয়!

সম্পাদকীয়
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১
  • ৪২৫ বার

পাচঁ বছরের রাদিয়া যেন জীবন্ত এক পুতুল।
রাদিয়া মায়ের মোবাইল থেকে বাবাকে কল দিয়ে বলে বাবা কখন আসবে বাসায়, কারণ হলো বাবা বাসায় আসলে তার মোবাইল দিয়ে কার্টুন দেখবে। রাদিয়ার হাসির ঝলকে বাসার সবায় হাসে আবার রাদিয়ার এতটুকু ব্যথায় কষ্টে ওর বাবা মা সর্বক্ষণ তৎপর। আর দশটা বাচ্চার মতো রাদিয়ারও খাবার খেতে খুব আপত্তি। শুধু মোবাইলে কার্টুন ছেড়ে দিলে দুই এক লোকমা মুখে দেয়। রাদিয়ার মা নিরুপায় হয়ে কার্টুন ছেড়ে দিয়েই সব সময় খাবার খাওয়ান। তাতে সময় কিছুটা সাশ্রয় হয়, পাশাপাশি রাদিয়াও কার্টুন দেখার তালে তালে কিছু হলেও মুখে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে খাওয়ানোর সময় ছাড়াও বাকি সময়ে রাদিয়া মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকতে চায় আর মোবাইল সরিয়ে নিলেই ভীষণ কান্নাকাটি করতে থাকে। রাদিয়া কোন কথাই শুনতে চায় না, বাবা মা রাদিয়া কে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। রাদিয়ার বাবা মা একজন চিকিৎসক এর পরামর্শ নিলেন, চিকিৎসক বললেন বর্তমান সময়ে রাদিয়ার মতো অসংখ্য শিশু এধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে,যার একমাত্র কারণ মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু। আর প্রতিদিন এক লাখ ৭৫ হাজার অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ২৫ শতাংশের বয়সই ১০ বছরের কম এবং ফেসবুকসহ সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়সই ১৮ থেকে ২৯-এর মধ্যে। জার্নাল অব ইয়ুথ স্টাডিজ জানায়, আমেরিকান শিশু-কিশোরদের ৯২ ভাগই প্রতিদিন অনলাইনে যায়। প্রতি পাঁচজনে একজন কিশোর গভীর রাতে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে শুধু এটা দেখার জন্য যে, তার মোবাইলে নতুন কোনো মেসেজ এসেছে কিনা। কানাডায় পূর্ণ বয়স্ক একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে দিনে দু’ঘণ্টা আর শিশু-কিশোররা সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় কাটায়। তার মানে আজ যে শিশুর বয়স ৮, সে তার জীবনের ১৫টি বছরই কাটিয়ে দেবে অন স্ট্ক্রিনে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট প্রসারের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী, যার মধ্যে শিশুরাও আছে। বিটিআরসির ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রায় ৩.৫ শতাংশ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে, যার বড় একটা অংশই যুক্ত থাকে নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের সঙ্গে।

বিশ্বব্যাপী শিশু ও কিশোরদের ভার্চুয়াল জগতের প্রতি এই আসক্তি কতটা বিপদ ডেকে নিয়ে আসছে, সেটা কি আমরা কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখেছি? পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের গবেষণা জানিয়েছে, যেসব শিশু কম্পিউটার, টেলিভিশন ও ভিডিও গেম নিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকে, তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও হীনমন্যতার শিকার হয় বেশি। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের অটিজম, মনোযোগ হ্রাস, হতাশা ও তীব্র বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে ভিডিও গেম আসক্তির সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়। কানাডার অ্যাসোসিয়েশন অব মেন্টাল হেলথের জরিপে উঠে এসেছে, ৭ থেকে ১২তম গ্রেডের যেসব শিক্ষার্থী দিনে দু’ঘণ্টার বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটায়, তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। টেলিযোগাযোগ কোম্পানি টেলিনর বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছে, পাশাপাশি পরিবারের শিশুরা অনলাইনে গেম খেলতে গিয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় গালাগালি, বর্ণবাদী ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রচণ্ড বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

মজার বিষয় হলো, প্রযুক্তি নির্মাতারা পুরো বিশ্বে প্রযুক্তি প্রসার ঘটালেও নিজের সন্তানদের কিন্তু এ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনকুবের বিল গেটসের সন্তানরা দিনে ৪৫ মিনিটের বেশি কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পায় না। শুধু তাই নয়, সন্তানদের বয়স ১৪ হওয়ার আগে বিল গেটস স্মার্টফোন তো দূরের কথা, মোবাইল ফোনই কিনে দেননি। আইফোন ও আইপ্যাডের নতুন মডেল বাজারে আসার আগেই অনলাইনে লাখ লাখ পিস অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। যে গ্যাজেট নিয়ে এত মাতামাতি, তার নির্মাতা অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস; কিন্তু তার সন্তানদের আইপ্যাড ব্যবহার করতে দেননি। আইপ্যাড যখন বাজারে এলো, স্টিভ জবসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তার সন্তানরা এটা পছন্দ করেছে কিনা, যার জবাবে তিনি বলেছিলেন, ওরা এটা ব্যবহার করেনি। কেননা সন্তানরা কতটা প্রযুক্তি ব্যবহার করবে তার সীমারেখা তাদের বেঁধে দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রযুক্তির হর্তাকর্তারা নিজেদের সন্তানদের কিন্তু ঠিকই প্রযুক্তির আগ্রাসী আসক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছেন। কারণ তারা এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন।

আমরা কেন জেনেশুনে আমাদের সন্তানদের ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছি? সময় থাকতে সমাধানের জন্য এখনই জোর প্রচেষ্টা চালানো জরুরি, তাই চলুন জেনে নিই-

পিতামাতা হিসেবে আমাদের করণীয় কি:

টিভি, স্মার্টফোন, ট্যাব, ইউটিউব চালিয়ে সন্তানকে খেতে অভ্যস্ত করানো যাবে না এবং দেড় থেকে দু’বছর বয়সী শিশুদের শুধু শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম দেখানো যেতে পারে অভিভাবকের উপস্থিতিতে। দুই থেকে পাঁচ বছর এবং টিনএজ বয়সীদের জন্য দিনে মাত্র এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা, যেটা অবশ্যই রাত ১১টার আগে। এ ক্ষেত্রে সন্তানের কাছে রোল মডেল হওয়ার জন্য নিজেদেরও নিয়ম মানতে হবে। অতি অবশ্যই ১৮ বছর হওয়ার আগে সন্তানকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়া যাবে না।

সন্তানকে সময় দিতে হবে, যাতে আসক্ত হওয়ার মতো কোনো সময় তার না থাকে। ঘরের কাজ, বই পড়া, খেলাধুলা, পরিবারের সঙ্গে আড্ডা ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিতে হবে এবং সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ছাড়া শিশুবান্ধব ব্রাউজিংয়ের ফিচারগুলোও চালু করা যেতে পারে অর্থাৎ ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে শিশু যাতে ক্ষতিকর বা বয়স অনুপযোগী কোনো সাইটে ঢুকে যেতে না পারে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সন্তান অনুসরণ করে আচরণ; তাই সর্বোপরি নিজেকে আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো না জেনেবুঝে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দিয়ে দিই, তবে এর ভয়ংকর পরিণতি অনিবার্য। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রযুক্তির প্রসারে গা ভাসিয়ে আমরা সন্তানদের অন্ধকারে ঠেলে দেব নাকি সচেতনতা তৈরি ও চর্চায় কার্যকরী উদ্যোগ নেব?

লেখক: মোঃ রাশেদুল আলম (রাশেদ)
সভাপতি, জাগ্রত সিক্সটিন
মুরাদনগর, কুমিল্লা।

সংবাদ টি ভাল লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরোও সংবাদ
© All rights reserved © 2020-2021 cumillarbani24.com
ডিজাইন ও ডেভেলোপার by A K AZAD
themesba-lates1749691102