এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
করোনায় আক্রান্ত দেবীদ্বারের বর্ষিয়ান আ’লীগ নেতা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জয়নুল আবেদীন ২১দিন বেঁচে থাকার যুদ্ধে লড়াই করে অবশেষে হেরে গেলেন। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা ধানমন্ডির আনোয়ারা খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ইন্নালিল্লাহে …রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১বছর। তিনি স্ত্রী, ২পুত্র, ১ কণ্যা, নাতী- নাতনী, বহু আত্মীয়-স্বজন, সহযোদ্ধা, সহ-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
মরহুমের প্রথম জানাযা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা শাহিনবাগ এবং বাদ আসর দেবীদ্বার উপজেলার নিজ গ্রাম দুয়ারিয়া এ.জি মডেল একাডেমী স্কুলল এন্ড কলেজ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানাযার পূর্বে মরহুমের কর্মজীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন,
কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল,
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান,
আ’লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাধারন সম্পাদক হাজী মো. রোশন আলী মাষ্টার,
সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ঢাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ,
দেবীদ্বার উপজেলা আ’লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এ,কে,এম সফিকুল আলম কামাল,
যুবলীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা আহবায়ক বাহাউদ্দিন বাহার,
জেলা যুবলীগ নেতা লুৎফর রহমান বাবুল,
ছাত্রলীগ উত্তর জেলার সাবেক সভাপতি ও ইউছুফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল চৌধূবী,
সেচ্ছা সেবক লীগ নেতা জিএস, আব্দুল মান্নান মোল্লা,
ছাত্র লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি আবু কাউছার অনিক,
ছাত্রলীগ দেবীদ্বার উপজেলা আহবায়ক ইকবাল হোসেন রুবেল,
মরহুমের পুত্র ইঞ্জিনিয়ার শাহনেওয়াজ পারভেজ প্রমূখ।
এসময় সঞ্চালনায় ছিলেন, আ’লীগ উপজেলা যুগ্ম-সস্পাদক মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া ও
প্রভাষক সাইফুল ইসলাম শামিম।
জানাযার নামাজ পড়ান, মরহুমের ভাগিনা মাওলানা মো. বেলাল হোসেন।
জানাযা শেষে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান
জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, আ’লীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও গনসংগঠন এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে। পরে মরহুমের পারিবারিক গোরস্তানে দায়ন সম্পন্ন হয়েছে।
আ’লীগ নেতা আলহাজ জয়নুল আবেদীন’র করোনা পজেটিভ রিপোর্ট ১২নভেম্বর আসার পর তাকে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকা ধানমন্ডির আনোয়ারা খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়,
সেখানে তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়,
২৬ নভেম্বর শারিরীক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে নর্মাল বেডে দেয়া হয়।
৩০ নভেম্বর আবারো স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাকে ওই দিনই বিকাল সাড়ে ৩টায় লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
অবশেষে তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে বৃহস্পতিবার ভোর ৬.৩৬মি: শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।।
দল- মত নির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, নির্লোভ, নিরহঙ্কার সাদা মনের এ মানুষটি ছিলেন মনে প্রাণে একজন দেশপ্রেমিক ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ।
বার্ধক্যের ভারে নুয়েপড়া এ প্রবীন নেতা ছাত্র জীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির মতাদর্শ ও ন্যাপের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
দেবীদ্বারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষির উন্নয়নে সভা-সেমিনার আলোচনা/ বক্তৃতায়, পরামর্শদানে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন।
অবসরে বই পড়া তার অভ্যাসে পরিনত ছিল। গাড়িতে বসেও তিনি পত্রিকা বই পড়তেন। বাগান পরিচর্চা ও নিজ প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ছোট ছোট সোনামণিদের পাঠদান করাতেন।
সৌখিন এ ব্যাক্তিটির ছাত্র জীবনে শিক্ষক হওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা থাকলেও হয়েছেন রাজনীতিবিদ।
আলহাজ্ব জয়নুল আবেদীন ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের দুয়ারিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মরহুম হাজী আব্দুর রহমান এবং মাতা মরহুমা রোছমতের নেছা।
শিক্ষা জীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের দুয়ারিয়া জুনিয়র মাদ্রাসা (বর্তমানে এটি দুয়ারিয়া এজি মডেল একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত।
ওইবিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন ইলিয়টগঞ্জ আর বি হাই স্কুল থেকে।
পরে খুলনা বি.এল কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢুকে পড়েন কর্মজীবনে।
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে জুনিয়র টেকনিশিয়ান (এ্যরোনটিক ডিপ্লোমা) পদে চাকুরি করাকালীন করাচি বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাশ করেন।
১৯৬৮ সালে চাকরিতে যোগদান করলেও মাঝে ১৯৭১ সালে সাময়িকভাবে চাকুরী ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
দেশ স্বাধীনের পর একই পদে বাংলাদেশ বিমানে যোগদান করে ১৯৭৭ সালে অবসর গ্রহন করেন।
১৯৭৭ সালে ইরান এয়ারলাইন্সে যোগ দিয়ে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত চাকুরী করেন।
পরে ঢাকা আউটার ষ্ট্যাডিয়াম মার্কেটে ‘শাহনূর ট্রেডার্স’ নামে ইলেক্ট্রনিক্স পাটর্স বিক্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন।
ব্যবসা করাকালীন সময় ন্যাপ এর সমর্থক ছিলেন।
১৯৯২ সনে ধামতী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৯৬ সনে দেবীদ্বার উপজেলা আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ২৪বছর স্বপদে থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০০১- ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনে অত্যন্ত সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করে সর্বস্তরের নেতা-কর্মিদের আস্থাভাজন ও শ্রদ্ধার আসনে স্থান করে নেন।
আলহাজ্ব জয়নুল আবেদীন ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
বড় ছেলে শাহনেওয়াজ পারভেজ ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার ঢাকায় অবস্থান করে নিজেদের ব্যবসা দেখা শোনা করেন।
দ্বিতীয় ছেলে শাহরিয়ার ইকবাল কাউছার আমেরিকা প্রবাসি।
সবার ছোট মেয়ে ড. শাহনুর শান্তা এফলাইট ফিজিক্স এ ডক্টরেট করে কিছু দিন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে, কানাডা অটোয়া বিশ্ব বিদ্যালয়, মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে তিনি লন্ডন স্বামীর সাথে অবস্থান করছেন।
প্রয়াত নেতার সহধর্মিনি মিসেস হাসনা আবেদীন একজন সু-গৃহিনী ও সমাজ সেবক।
এছাড়াও তিনি দুয়ারিয়া এ জি মডেল একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ছিলেন।
তিনি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ও উন্নয়নে সহযোগীতা ছাড়াও দুয়ারিয়া রহমানিয়া এতিমখানা কমপ্লেক্স ও কলকাকলি আদর্শ বিদ্যানিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রয়াত এ নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন, কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল,
সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এ,বি,এম গোলাম মোস্তফা,
আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডুলীর সদস্য, সাবেক এমপি ও উপ-মন্ত্রী এ,এফ, এম, ফখরুল ইসলাম মূন্সী,
ন্যাপ কেন্দ্রয় সভাপতি সাবেক এমপি আমেনা আহাম্মেদ,
আ’লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি মো. রুহুর আমিন,
সাধারন সম্পাদক হাজী মো. রোশন আলী মাষ্টার,
সাংগঠনিক সম্পাদক ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাজী মো. হুমায়ুন কবির,
বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ঢাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ,
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা সভাপতি কমরেড এবিএম আতিকুর রহমান বাশার,,
সাধারন সম্পাদক কমরেড পরেশ কর,
প্রবীন ন্যাপ নেতা মুস্তাকুর রহমান ফুল মিয়া,
ন্যাপ কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি বীর গ্যারিলা মুক্তিযোদ্ধা সফিক সিকদার,
আ’লীগ দেবীদ্বার উপজেলা সাধারন সম্পাদক হাজী মো. মনিরুজ্জামান মাষ্টার, যুগ্ম-সাধারন সস্পাদক মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এ,কে,এম সফিকুল আলম কামাল,
ন্যাপ উপজেলা সভাপতি অনিল চক্রবর্তী,
সাধারন সম্পাদক মমিনুর রহমান বুলবুল,
উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হাজী আবুল কাসেম ওমানী,
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট নাজমা বেগম,
মহিলা আ’লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য শিরিন সুলতানা প্রমূখ।
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার,
০১৮১৯৮৪৪১৮২,
০৩/১২/২০২০ইং।