এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ দেবীদ্বার(কুমিল্লা) প্রতিনিধি//
দূর্ভোগের অপর নাম-‘মরণফাঁদ খ্যাত ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’। ১৯৪৭ সালে সড়কটি প্রতিষ্ঠার থেকে ৭৩বছর ধরেই চলছে খোড়াখুড়ি-সংস্কারের কাজ। বছরের পর বছর এ সড়কটির দেখভালে রয়েছেন সওজ’র পালাক্রমে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী, কিন্তু এক দিনের জন্যও নিরাপদে-স্বস্তিতে গন্ত্যব্যে পৌঁছতে পারেনি যাত্রী ও মালামাল পরিবহনগুলো। গত অর্থবছরে ২৩কোটি টাকা প্রাক্কলনব্যয়ে সড়ক সংস্কার চলতি বছরের ৯সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেও, এখনো চলছে সংস্কার কাজ। তবে সওজ’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরাতন সড়কের জন্য আর কোন বরাদ্ধ থাকছেনা। আগামী একনের বৈঠকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফোর-লেইনে সড়কটি উন্নীতকরণে ৬মাসের মধ্যে কার্যাদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, গতবছরের জুন মাসে ২০১৯-২০২০ইং অর্থবছরে ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যানট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র সরাইল উপজেলার কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত দরপত্রে ‘হাসান টেকনো বিল্ডার্স’ ও ‘মেসার্স সোহাগ এন্টার প্রাইজ’ ২৩কোটি টাকার প্রাক্কলনব্যায় হিসেবে কাজটিপান। দরপত্রে কাজটি সম্পন্ন করায় ২০১৯সালের ৯ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯মাস সময়সীমা বেঁধে দেয়াহয়। গত মাসের ৮সেপ্টেম্বর কার্যাদেশের সময়সীমা শেষ হলেও এখনো সড়কের বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার ও দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজার এলাকায় ঢালাইকৃত অংশের একপাশ চালু হয়নি।
উপরন্ত দেবীদ্বার থানাগেইট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত ঢালাই করা অংশের ৬টি প্যানাল ভেঙ্গে ইট, পাথর সূরকী, সিমেন্ট বালুতে পরিনত ও ছোট বড় গর্তের সৃষ্টিহয়ে রডগুলো ভেসে ইঠেছে। চলমান ভারী যানবাহন যাতায়তকালে গর্তে পড়ার ঝাঁকুনিতে পাশ^বর্তী বহুতল ভবনগুলোও কেঁপে উঠছে। প্রায়ই রাতের অন্ধকারে রডের গুতোয় ভারী যানবাহনের টায়ার ফুটা এবং এক্সেল ভাঙ্গার শব্দে ঘুমন্ত মানুষ জেগে উঠছেন। কিছু কিছু যানবাহন ওই অংশ ভাঙ্গা সড়কের গর্তের মুখমুখী এসে থমকে যাচ্ছে। এতে যানজটও চরম আকার ধারন করছে।
এবিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কুমিল্লা’র নির্বাহী প্রকৌশলী ড.মোহাম্মদ আহাদউল্লাহ বলেন, অনেক আগেই সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হয়েগেছে। এখনো জাফরগঞ্জ বাজার এলাকার ঢালাইকরা অংশের একাংশ চালু না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন যে কাজ করা হচ্ছে তা ডিপার্টম্যান্টাল মেইন্টেনেন্টস করা হচ্ছে। দেবীদ্বার থানা গেইট এলাকায় সদ্য নির্মীত ঢালাই ভেঙ্গেযাওয়ার বিষয়টি প্রথমে অজানা থাকলেও পরবর্তীতে জানারপর ওই অংশের ৬টি প্যানাল পুনরায় সংস্কারের আশ^াসও দেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিলে ‘সড়ক ও জনপদ বিভাগ’ কর্তৃক গত বুধবার দুপর থেকে সদ্য নির্মিত সড়কের উপর ঢালাইকৃত ভাঙ্গা অংশের ৬টি প্যানাল উঠিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছে। ওই অংশের সংস্কারের কারনে আবারো যানজটের কবলে ‘কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’। ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারন জনগন, যাত্রী ও মালামাল পরিবহন।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭সালে কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক সড়কটি চালু হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর সড়কটি আঞ্চলিক মহা-সড়ক নামে পরিচিতি পায়। সড়কটি চালু হওয়ার পর বিগত ৭৩বছর ধরে সড়কের খানা খন্দ, দেবে যাওয়া অংশ, ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ, কালভার্ট সংস্কার কাজ চলে আসছে। কখনো ৪কোটি, কখনো ১০কোটি, আবার কখনো ২৩কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও মেরামতের কাজ চললেও একদিনের জন্যও যাত্রী ও মালামাল বহনের পরিবহগুলো স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। বছরের অধিকাংশ সময়ই সড়ক ও জনপদ বিভাগ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারগন সড়ক সংস্কারে ব্যস্ততম সময় কাটিয়ে আসছেন। এখনো তা অব্যাহত আছে। কবে তা থেকে নিস্ক্রীতি পাবে তা কেউ জানেননা।স্থানীয়রা যানজট ও দূর্ঘটনা এড়াতে এবং সড়কটি দ্রæত ফোর-লেইনে উন্নীতকরণে, সড়কের দু’পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি, অবৈধ স্থাপনা, দৈনিক বাজার, সিএনজি ও অটো রিকসা ষ্ট্যান্ড উচ্ছেদ, সড়কের দু’পাশের জমি অধিগ্রহন, পয়নিষ্কাশনে সড়কের পাশে আরসিসি ড্রেন নির্মান ও ড্রেনের উপর ¯øাভ দিয়ে ফুটপাত তৈরী, গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে ফুট ওভার ব্রীজ নির্মানেরও দাবী জানান। তবে বিগত দুই যুগ ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও একনের সভায় উক্ত সড়কটি টু-লেইন, ফোর-লেইন, সিক্স-লেইনে উন্নীত করার আশ^াস দিলেও এরই মধ্যে কয়েকটি সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরও তা বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখেনি। গত কয়েক বছরে একাধিক সার্ভেয়ার টিম, এলও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি সড়ক ও জনপদ বিভাগ জরিপ, লেভেলিং মেসিন, দূরবিন দিয়ে সার্ভে করা, জমি অধিগ্রহণের সাইড নির্ধারন ও পরিকল্পনা, মাপঝোপ সমপন্ন করতে দেখা গেলেও সবই এখন ফাইলবন্দী। বর্তমানে আপদকালনি সময়ে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার এলাকায় ২৪ফুট প্রসস্থে সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, এ সড়কটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মানুদের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাখরাবাদ, গোপালনগর, শ্রীকাইল, বাঙ্গরা, তিতাস, হবিগঞ্জ প্রভৃতি গ্যাস ফিল্ডের সঙ্গে এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তহাট, আখাউড়া স্থল বন্দরের সাথে যোগাযোগে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ক্রমবর্ধমান ভারী যানবাহনের চাপে সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি, দেবে যাওয়ার যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ও বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠেছে। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়কটি আগামী ৪থেকে ৬মাসের মধ্যে ফোর-লেইনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুব শীঘ্রই সড়কটি বর্ধিতকরণের কাজ শুরু হবে। আগামী একনের বৈঠকে বাজেট- পরিকল্পনা চুড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে, ইতিমধ্যে পুরনো সড়কটি সংস্কারে আর কোন কাজ করা হবেনা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ একাধিক প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ১৯৪৭ সালে সড়কটি চালু হওয়ার পর, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিচিতিই নয়, ন্যাশনাল হাইওয়ে’র দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। ঢালাইকৃত সড়কের অংশটি কমপক্ষে ২১দিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে সড়কটি দির্ঘদিনের স্থায়িত্ব পেত। এসড়কের কাছাকাছি বিকল্প সড়ক না থাকায়, সংস্কারে পরপরই যানবাহন চলাচল শুরু করে। তাই সড়কের ষ্ট্রেনথ গেইন করতে না পারায়, ভেঙ্গে যাওয়া ৬টি প্যানাল পুনসংস্কার করতে হচ্ছে, তাছাড়া সড়কের আস্তরের নিচে কিছু নেই, লেয়ার করা হয়নি, তার উপর ভারী যানবাহন চলাচলে সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যেই সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে পূর্বের অবস্থানে চলে আসছে। বিগত বছরগুলোতে কয়েকদফা একনের বৈঠকে এসড়কটি প্রথম সারির মহা-সড়কে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিলেও রাজনৈতিক টানপোড়ানে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।নাম না প্রকাশের শর্তে একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, গত একনের বৈঠকে ৭হাজার ৫শত কোটি টাকা ব্যয়ে ফোর লেইন সড়ক নির্মানের প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয়। ওই প্রস্তাব ঋণ চুক্তির শর্তারোপে রাজনৈতিক সমোঝোতার টানপোড়নে আটকে গেছে। সড়ক উন্নয়নে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঋণ চুক্তির ৭৫% বাংলাশের এবং বিভিন্ন ইনুষ্টেলম্যান্ট আমদানী সহ নারামূখী শর্ত ছিল। আগামী একনের সভায় ঋণচুক্তির শর্ত সিথিল হলে ৬মাসের মধ্যেই ফোর-লেইনে সড়ক উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হবে। এ ব্যাপারে চলমান সংস্কার কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকাদের সাথে সেল ফোনে যোগাযেগ করার চেষ্টা করেও তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার,
০১৮১৯৮৪৪১৮২,
২২/১০/২০২০ইং।